চার দশক ধরে দেশে মধু উৎপাদন ও বাজারজাত করছে এপি। দেশ-বিদেশে এখন ব্যাপকভাবে সমাদৃত এপির মধু। মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা বিবেচনা করেই মূলত দেশের বাজারে খাঁটি মধু বিপণনে আগ্রহী হই আমরা। সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন আয়ুর্বেদীয় ফার্মাসি (ঢাকা) লিমিটেডের (এপি) চেয়ারম্যান রাকিব মোহাম্মদ ফখরুল। তিনি বলেন, ‘শুরুর সময়কালে আমাদের গ্রুপ চেয়ারম্যান এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী স্যার মধু নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছেন, তা এখন বাস্তবায়িত। পাঁচ বছর ধরে আমরা জাপান, কুয়েত, সৌদি আরবে মধু রপ্তানি করে আসছি। প্রতিবছর ২৫০-৩০০ টন সরিষা, লিচু ও কালিজিরা ফুলের মধু আমরা রপ্তানি করি। এপি বাংলাদেশের মধুর সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক।’
দেশে ১০ ধরনের মধু পাওয়া যায় জানিয়ে রাকিব মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, ‘আমরা সুন্দরবন, লিচু, সরিষা, কালিজিরা ও ধনিয়া ফুলের মধু রাজারজাত করি। আমাদের নিজস্ব খামার আছে ৪৫০ বক্সের। তা ছাড়া আমাদের নির্দিষ্ট ও অনুমোদিত বি-কিপার আছে প্রায় ২৫০ জন। খামার থেকে মধু সংগ্রহ করে নিজস্ব পরিবহনে আমরা মধু কারখানায় নিয়ে আসি এবং অত্যাধুনিক মেশিনে প্রসেস করে তা কন্সেন্ট্রেট করি এবং বোতলজাত করি। আমরা যেহেতু মধু রপ্তানি করি তাই উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে মধু উৎপাদন করতে হয় আমাদের। বর্তমানে আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ISO 22000:2018 বাস্তবায়নে কাজ করছি। এসএমই ফাউন্ডেশন এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ও বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে সহযোগিতা করছে। তা ছাড়া উন্নতমানের মধু উৎপাদনে আমরা নেদারল্যান্ডস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীন এবং তুরস্ক থেকে বিশেষজ্ঞ এনেছি। বাংলাদেশের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টোমলজি বিভাগের প্রসেফর সাখাওয়াত হোসেন স্যার মধুর উন্নয়ন ও মৌ পালনে আমাদের অনেক সহযোগিতা করছেন।’
মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, ‘নিয়মিত মধু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, যা কিনা কভিড আক্রান্ত রোগীর নিয়ামক। তাই কভিড অবস্থায় মধুর অনেক চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে দেশে বার্ষিক ১০ হাজার টনের মতো মধুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদার ৩০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত মধু দ্বারা মেটানো সম্ভব। কিন্তু সরিষা ও ধনিয়া ফুলের মধু প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে জমে যায় বিধায় তা ভেজাল মনে করে অনেকে কেনে না। যদিও এর গুণাগুণে কোনো পরিবর্তন হয় না। রোদে বা হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ রাখলে আবার গলে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এর থেকে উত্তরণের জন্য আমরা অনেক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি এবং সরিষা মধুর বেশির ভাগই আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করছি।’ তিনি বলেন, ‘মধুর বাজারে প্রতিযোগিতা অনেক। বিশেষ করে বিদেশি মধুর কারণে। দেশে উৎপাদিত মধুর মধ্যে ভেজাল নেই বললেই চলে। বাজারে ভেজাল মধুর উপস্থিতি অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। এর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও আছে। ভোক্তা সন্দেহ পোষণ করে এবং আস্থাহীনতা তৈরি হয়। এপি শতভাগ খাঁটি ও প্রাকৃতিক মধু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের মধু সমানভাবে সমাদৃত এবং প্রতিবছর রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে।’
মধুর মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাকিব মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, নিয়ন্ত্রণে এবং বাজার সম্প্রসারণে সরকারের ভূমিকা অনেক। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কোনো ল্যাব নেই। কোনো গবেষণাগার নেই। মধু ও মৌ পালন নিয়ে কোনো রিসার্চ সেন্টার নেই। সরকারের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অবশ্য নিয়মিত মৌ মেলার আয়োজন ও সঙ্গে সেমিনার করে বাজার সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করছে। সরকার দেশীয় উৎপাদন ও তার স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে প্রচারণা চালালে ভালো হয়। মধুর উন্নয়নের জন্য সরকার ‘মধু বোর্ড’ গঠন করতে পারে। তিনি বলেন, ‘এপি শুধু আন্তর্জাতিক মানের মধুই উৎপাদন করে না সঙ্গে বি-কিপারদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। আমাদের বিশেষায়িত মধুর কারখানায় সরকারি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরিদর্শন করেন। মধুর উন্নয়নে আমরা বিশ্বের অনেক দেশের প্রগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। একমাত্র আমাদের প্রতিষ্ঠানই ‘হানি ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস এপিমন্ডিয়া’য় ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছে।